চাকরির জন্য সিভি লেখার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, সিভি ফরমেট ও নমুনা

চাকরির জন্য সিভি (CV-Curriculum Vitae) তৈরির সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি আপনি কি জানেন? সিভি লেখার সময় যে নিয়মগুলো মাথায় রেখে  সিভি তৈরি করলে  চাকরির জন্য আকর্ষণীয় সিভি তৈরি  করা যায়  এবং নিখুঁত সিভি লেখার কৌশল  সম্পর্কে জানব।

চাকরির জন্য সিভি

জীবনবৃত্তান্তের বা  সিভি (CV-Curriculum Vitae) নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট নেই। প্রয়োজন বুঝে, যেখানে আবেদন করবেন  এবং কাজের ধরন বুঝে তার ওপর নির্ভর করে সিভি তৈরি করতে হয়। একটি আদর্শ এবং আকর্ষণীয়  নিখুঁত সিভি লেখার কৌশল সম্পর্কে জানব এবং সবশেষে  রয়েছে সিভি লেখার কিছু উপকারী টিপস।

পেজ সূচিপত্র: সিভি  (CV-Curriculum Vitae) লেখার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম


  • সিভি কি (What is CV) ?
  • সিভি লেখার নিয়ম: কী কী থাকা জরুরী?
    • উদ্দেশ্য (Objective)
    • ছবি (Photo)
    • নাম এবংযোগাযোগের তথ্য (Name & Contact Information)
    • শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification)
    • কাজের অভিজ্ঞতা (Work Experience)
    • রেফারেন্স (Reference)
  • সিভি লেখার নিয়ম: সিভি ফরমেট

সিভি কি (What is CV) ?

সিভি (CV) ল্যাটিনে যার অর্থ Course of Life. সিভি (CV) হচ্ছে একজন মানুষের পরিচয়, সার্বিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, অর্জনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা জীবনবৃত্তান্ত।  সিভি (CV) চাকরি ছাড়াও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়। সিভিতে একটি মানুষের জীবনের সকল অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে পারবেন। কর্পোরেট  জগতে সিভি (CV) সাধারণত  2-3 পাতার হয়ে থাকে ।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল সিভির (CV-Curriculum Vitae) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং প্রতিষ্ঠানকে আপনি  কী দিতে পারবেন তা সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় ভাবে কয়েক লাইনে লিখতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত বক্তব্য সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় রেখে স্মার্ট ভাবে সিভি লেখার নিয়ম কানুন চলুন জেনে নেয়া যাক।  

আরো পড়ুন : RESUME কি? CV এবং RESUME এর মধ্যে পার্থক্য

সিভি লেখার নিয়ম - কী কী থাকা জরুরী?

প্রথমেই স্মার্ট একটি ফরমেট সিভির জন্য সিলেকশন করতে হবে। সিভিতে অতিরিক্ত স্টাইলিশ কোন ফরমেট বা ফ্রন্ট ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্যই সঠিক ফরম্যাটে সিভি লিখতে হবে। সিভির ফরমেট সম্পর্কে  আমরা সিভি ফরমেট সেকশনে সবিস্তারে জানবো । 

জীবনবৃত্তান্ত (সিভি-CV) যার দ্বারা চাকরিদাতার কাছে চাকরিপ্রার্থীর প্রথম পরিচয় সিভির মাধ্যমে হয়ে থাকে। জীবনবৃত্তান্ত যেন চাকরিপ্রার্থীর প্রতিচ্ছবি। তাই যার সিভি যত বেশি সুন্দর, এট্রাক্টিভ হবে সে ততো বেশি এগিয়ে থাকবে। চলুন জেনে নেয়া যাক সিভিতে অল্প কথায় নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার কিছু নিয়ম কানুন।

উদ্দেশ্য (Objective)

উদ্দেশ্য (Objective) কী? আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং প্রতিষ্ঠানকে আপনি  কী দিতে পারবেন তা সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় ভাবে কয়েক লাইনে লিখে তুলে ধরাটা উদ্দেশ্য (Objective)। সিভির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরা। তাই সিভিতে যতটুকু প্রয়োজন তার থেকে বেশি না লেখাটাই উত্তম। সম্প্রতি কোন এক জরিপে দেখা গেছে একটি সিভি দেখতে নিয়োগকারীরা এক মিনিটের কম সময় ব্যয় করে থাকেন। সুতরাং সিভিতে অল্প কথায় নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরাটাই স্মার্ট সিভি লেখার টিপস।

ছবি (Photo)

আপনার বর্তমান সময়ে তোলা স্পষ্ট ছবি ব্যবহার করতে হবে। পাসপোর্ট সাইজের স্ট্যান্ডার ছবি হতে হবে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহার করা ছবি বা অস্পষ্ট কোন ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

নাম এবং যোগাযোগের তথ্য (Name & Contact Information)

সিভির শুরুতে নিজের পূর্ণ নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকা উচিত। নাম এবং যোগাযোগের তথ্য নির্ভুলভাবে লিখতে হবে। শুরুতে শিরোনাম হিসেবে সিভি (CV) বা ‘কারিকুলাম ভিটা’ ব্যবহার না করে নিজের নাম শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরো নাম, প্রফেশনাল টাইটেল, ই-মেইল, মোবাইল নাম্বার,  লিঙ্কডইন এবং হোম অ্যাড্রেস দিতে হবে ঠিকভাবে। অনেকেই একটা ভুল করেন, সিরিয়াল ঠিক রাখেন না। এখানে সিরিয়াল মেন্টেন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, নামের আগেই লিঙ্কডইন বা ই-মেইল আসবে না, তেমনি মোবাইল নাম্বারও কিন্তু লিঙ্কডইনের পরে যাবে না। সুতরাং সিরিয়াল মেন্টেন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরো পড়ুন : এই সিভি ইংরেজীতে পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification)

শিক্ষাগত যোগ্যতা সিভিতে সঠিক এবং নির্ভুলভাবে লিখতে হবে । শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার নিয়ম হচ্ছে আপনার সর্বশেষ ডিগ্রি প্রতিষ্ঠানের নাম ও বছর সহ প্রথমে লিখতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের নামসহ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত উল্লেখ করতে হবে। প্রথমে আপনি যেই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তার নাম, তারপর সে প্রতিষ্ঠানের নাম, পাশ করার সাল এবং জিপিএ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

কাজের অভিজ্ঞতা (Work Experience)

আপনার যদি প্রাসঙ্গিক কোন কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে সেটা উল্লেখ করতে হবে । যেমন - আগের চাকরি, ইন্টার্নশিপ এবং কাজের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। কোথায় কোথায় চাকরি করেছে এবং কতদিন যাবত সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন তারিখ সহ উল্লেখ করতে হবে। সিভির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাজের অভিজ্ঞতা, আপনার পূর্ববর্তী সকল কর্মস্থলের কাজের  বিবরণ দেবেন। আপনি যে কাজ করেছেন তার থেকে বেশি গুরুত্ব যেন পায় কতটা সঠিক এবং সুন্দর ভাবে কাজগুলো আপনি করেছেন, আর তার প্রভাব কতটুকু ছিল। আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন সেটাও সুন্দরভাবে উল্লেখ করবেন কারণ কোম্পানি আপনার থেকে কি পাবে সেটা যদি স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে তবেই আপনাকে সিলেক্ট করা হবে ।

রেফারেন্স (Reference)

আপনার পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনকে রেফারেন্স হিসেবে কখনোই রাখবেন না। রেফারেন্স হিসেবে আপনার কোন শিক্ষক অথবা কর্মস্থলের সিনিয়র কাউকে রাখতে পারলে ভালো হয়। রেফারেন্স হিসেবে যাদেরকেই রাখুন না কেন অনুমতি নিয়ে নিন। ভুল কোন তথ্য সিভিতে দিবেন না।

সিভি লেখার নিয়ম: সিভি ফরমেট

প্রফেশনাল সিভির ফরমেট সাধারণত একই রকম হয়ে থাকে, কারণ সব ধরনের সিভিতেই নাম, ঠিকানা, কন্টাক্ট, লিঙ্কডইন ইত্যাদি বাধ্যতামূলক দিতে হবে। আপনাকে আপনার কাজগুলো সিভির মধ্যে সুন্দরভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে ফুটিয়ে তুলতে বলবে। আপনার একাডেমিক ও প্রফেশনাল অর্জনগুলো উল্লেখ করতে হবে এতে আপনার টিভি আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। আপনি যদি কোন ট্রেনিং করে থাকেন সেসব লিখতে হবে এতে আপনার অভিজ্ঞতা প্রকাশ পাবে। আপনার যদি কোন অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে আপনি যতই ভালো ফরমেটে সুন্দর করে সিভি তৈরি করে দেন না কেন কিন্তু কোন লাভ হবে কি?

সিভিতে মার্জিন কম রাখুন। যদি আপনার তথ্য বেশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মার্জিন কমিয়ে ফেলুন। CV সচরাচর ২ পৃষ্ঠা হয়ে থাকে তাই মার্জিন কমিয়ে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে লেখার চেষ্টা করুন, এরপর প্রতি ১০ বছরের অভিজ্ঞতার দ্বারা ১ পৃষ্ঠা করে CV বৃদ্ধি পায়।

সিভির ফরম্যাট নয়, নিজের কাজের অভিজ্ঞতা গুলোকে সুন্দরভাবে সিভির মধ্যে ফুটিয়ে তোলাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে

সিভি সংক্ষিপ্ত ভাবে লেখার চেষ্টা করুন। তবে সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বাদ রাখা যাবে না। সিভি দুই পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করুন। তবে আপনার চাকরির বা কাজের উপর ভিত্তি করে পৃষ্ঠা বাড়াতেও পারেন। তবে সিভি দুই পৃষ্ঠার হলে নিয়োগকর্মকর্তা সিভি ভালো করে দেখে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিয়োগকারীরা আপনার ভুলগুলো খুঁজে বের করে তাই সিভি লেখার সময় লক্ষ্য রাখুন বানানগুলো এবং কোন তথ্য যেন ভুল না হয়। সিভি তৈরি করার পর প্রিন্ট করার আগে অবশ্যই অন্য একজনকে দিয়ে সিভি ভালো করে পড়িয়ে নিন ।

Next Post Previous Post